বিদ্যালয়ের ইতিহাস….
প্রাচ্যের ডান্ডি নামে খ্যাত নারায়ণগঞ্জ শীতলক্ষ্যা বিধৌত নদীর পূর্ব পার্শ্বস্থ বন্দর থানার অনগ্রসর নারী সমাজের শিক্ষার উন্নতিকল্পে প্রায় ৫৯ বছর পূর্বে এলাকার বিদ্যোৎসাহী ব্যক্তিগণ একটি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপনে এক মহতী উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এ উদ্যোগের পুরোধায় ছিলেন এলাকার বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী ব্যক্তি জনাব মোঃ ফরিদ উদ্দিন (এম এ)। ১৯৫৯ সালে তাঁর উদ্যোগের প্রতি অকুন্ঠ সমর্থন জানিয়ে এগিয়ে আসেন বন্দর বি এম ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের তৎকালিন প্রধান শিক্ষক জনাব রইস উদ্দিন আহমেদ ও এলাকার বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিবর্গ। বিশেষ সহযোগিতায় যারা ছিলেন তাঁরা হলেন সর্বজনবা কাজী আব্দুল কাইউম, মুন্সি আব্দুল মান্নান, কাজী আব্দুল করিম, হাবিবুর রহমান (লাল মিয়া), বদর উদ্দিন খান, মোঃ আসাদ মিয়া, মোঃ জয়নাল আবেদীন খান ও আরো অনেকে। প্রতিষ্ঠানের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৫৯ সালে বন্দর বি এম ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয় ভবনে। পরবর্তীতে বন্দর বালিকা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম শুরু হয়। প্রতিষ্ঠানের সুষ্ঠু পরিচালনার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়। উক্ত কমিটির সদস্যগণ হলেন- ১) এস কে মাহমুদ-মহকুমা প্রশাসক, নারায়ণগঞ্জ। ২) মোঃ ফরিদ উদ্দিন (এম এ)- প্রতিষ্ঠাতা। ৩) শ্রী সুধীর চন্দ্র দে। ৪) মুন্সি আব্দুল কাদির মিয়া। ৫) কাজী আব্দুল কাইউম। ৬) মোঃ হাবিবুর রহমান (লাল মিয়া)। ৭) মোঃ আব্দুল কাদির মিয়া। ৮) মোঃ কাজী আব্দুল করিম। ৯) মোঃ আব্দুস সালাম মুন্সি। ১০) শ্রী মিহির লাল সাহা। ১১) মোঃ কালা চাঁন মিয়া। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির অনুমোদনের প্রয়োজনে নিজস্ব জমি ও গৃহ প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ায় ১৯৬৭ সালে ৮১ শতাংশ জমি ক্রয় করার জন্য জরাব ফরিদ উদ্দিন সাহেব নগদ ১৫,২০০/- টাকা দান করেন। এ সময় শ্রী সুধীর চন্দ্র দে কিছু আর্থিক সহায়তা করেছিলেন। প্রতিষ্ঠানটি অনুমোদনের জন্য তৎকালিন প্রধান শিক্ষক জনাব আব্দুল খালেক সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। এ ব্যাপারে তার সাথে সহযোগিতা করেন বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী জনাব মুন্সি আব্দুল মান্নান ও জনাব কাজী আব্দুল কাইয়ূম।
অতঃপর এলাকবাসীর সহায়তায় প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব স্থানে ১৯৬৭ সালে বেড়ার ঘর নির্মিত হয়। তৎকালিন প্রধান শিক্ষক জনাব আব্দুল খালেক এ মহকুমা প্রশাসক এস কে মাহমুদের সহযোগিতায় ০১-০১-১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দ তারিখে প্রতিষ্ঠানটি বন্দর গার্লস স্কুল নামে বোর্ডের স্বীকৃতি লাভ করে। এ বছরই জনাব মোঃ আব্দুল মালেক প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং শিক্ষার্থীরা এস.এস.সি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ লাভ করে। প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন কর্মকান্ডে তৎকালিন সহ-সভাপতি জনাব কাজী আব্দুল কাইউম বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন। তাঁরই নেতৃত্বে তৎকালীন মহকুমা প্রশাসক জনাব মোজাম্মেল করিম ও মহকুমা অফিসের কর্মরত জনাব মোঃ নোয়াব আলী পেশকার-এর সহায়তায় ১৯৭৯ সালে বিদ্যালয়ের ১৯ শতাংশ জমি অধিগ্রহণ করা হয়। ১৯৮৫ সালে বর্তমান প্রতিষ্ঠান ভবণের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপিত হয়। অতঃপর সরকারি ও বেসরকারি সাহায্য সহযোগিতায় ধাপে ধাপে প্রতিষ্ঠানটি বর্তমান পাঁচতলা ভবনে রূপান্তরিত হয়। এ প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা ও উন্নয়নের ইতিহাসে প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা জনাব মোঃ ফরিদ উদ্দিন (এম এ), শিক্ষানুরাগী জনাব মুন্সি আব্দুল মান্নান ও তৎকালীন সহ-সভাপতি জনাব কাজী আব্দুল কাইউম সাহেবের নাম চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
উল্লেখ্য ২০০৭ শিক্ষাবর্ষ হতে এই প্রতিষ্ঠানে কলেজ শাখা চালু হয় এবং ২০১৯ জুলাই হতে কলেজটি MPO (সরকারি বেতনভুক্ত হয়)। ২০০৮ সালে শিক্ষা মন্ত্রনালয় কর্তৃক বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক শাখায় পাঠদানের অনুমতি লাভ করে। ২০১০ সালে শিক্ষা মন্ত্রনালয় ও বোর্ডের স্বীকৃতি প্রাপ্ত হয়। প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা, গভর্নিং বডির সভাপতি ও সদস্যবৃন্দের সহায়তায় বর্তমানে ৫ম তলা কলেজ ভবনে শিক্ষা কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হচ্ছে।
তথ্য সূত্র: জনাব মোঃ ফরিদ উদ্দিন (এম এ), প্রতিষ্ঠাতা, বন্দর গার্লস স্কুল এন্ড কলেজ